ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংঃ ক্যারিয়ার, উচ্চ শিক্ষা, পেশাগত দায়িত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। প্রকৌশলের প্রাচীনতম এবং সমৃদ্ধ শাখাগুলোর মধ্যে একটি হল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং। আধুনিক জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সকল সুযোগ সুবিধা যেমন – হাইওয়ে, সেতু, টানেল, স্কুল, হাসপাতাল, বিমানবন্দর এবং অন্যান্য ভবন, স্যুয়েজ সিস্টেম এবং পানি পরিশোধন সিস্টেম সম্পর্কিত পরিকল্পনা, নকশা, নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষন এবং তত্ত্বাবধান এসবই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ অন্তর্ভুক্ত। প্রকৌশলের এই শাখাটি শুধুমাত্র অবকাঠামোগত উন্নতিই করে না, এটি জনসাধারন এবং পরিবেশের স্বাস্থ্যগত সংরক্ষনও নিশ্চিত করে।
ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং – ক্যারিয়ার, উচ্চ শিক্ষা, পেশাগত দায়িত্ব
এই পোস্টের মধ্যে আমরা ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর উচ্চশিক্ষা, তারা কোন ধরনের কাজে অবদান রাখে এবং তাদের বেতন ভাতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং হল একটি ডিপ্লোমা লেভেলের কোর্স। সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা আমাদের আধুনিক সমাজের জন্য সড়ক, সেতু, খাবার পানির যোগান, এনার্জি সিস্টেম, সমুদ্র বন্দর, বিমানবন্দর এবং সার্বিকভাবে উন্নত অবকাঠামোর জন্য নকশা, নির্মাণ, এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজগুলো করেন। এছাড়া সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং আরেকটি শাখা পরিবহন প্রকৌশলে সড়ক, রেলপথ, সাবওয়ে সিস্টেম, এবং বিমানবন্দর ডিজাইন ও তৈরি নিয়ে কাজ করে। এভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আছে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অবদান।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যারিয়ার
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং দেশের সার্বিক কাঠামোগত উন্নয়নের কারনে বিভিন্ন ধরনের কাঠামোগত স্থাপত্য তৈরি চলছেই এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদেরই এই ধরনের কাজগুলোর পরিকল্পনা থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছু তদারকি করতে হয়। যার কারনে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা কখনো কমে না। সভ্যতার শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত কখনই তাদের কর্মসংস্থানের কমতি ছিলোনা। সুতরাং, দেশেত বটেই দেশের বাইরেও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে।তবে এ পেশায় উন্নতি করতে হলে দরকার সৃজনশীলতা, কঠোর পরিশ্রম, দক্ষতা আর অভিজ্ঞতার। যদি কেউ সৃজনশীল এবং পরিশ্রমী হয় তাহলে এই পেশায় সফলতার শীর্ষে উঠা তার পক্ষে সম্ভব।
ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কোথায় করবেন
সারা দেশ জুড়ে ৪৯ টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং–এ ডিপ্লোমা করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, গ্রিন ইউনিভার্সিটি সহ আরও কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা করা যায়।
ভর্তির যোগ্যতা
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমার চার বছর মেয়াদি আট সেমিস্টারের এই কোর্সে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার পর যে কোন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া সম্ভব। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড নীতিমালা প্রণয়ন করে থাকে।
ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মান
ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সটির মান HSC সার্টিফিকেটের তুলনায় বেশি, তবে একই বিষয়ের বিএসসি ডিগ্রির তুলনায় কম। ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং হল বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রবেশিকা স্তর।
একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব
- প্রজেক্টের প্ল্যান এবং ডিজাইনের জন্য বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, জরিপ প্রতিবেদন, মানচিত্র এবং অন্যান্য ডেটা বিশ্লেষণ করা।
- প্রকল্পের পরিকল্পনা ও ঝুঁকি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে নির্মাণ খরচ, সরকারী বিধিমালা, সম্ভাব্য পরিবেশগত দুর্যোগ এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করা।
- স্থাপত্যের ফাউন্ডেশনের পর্যাপ্ত দৃঢ়তা নির্ধারণ করার জন্য সয়েল টেস্টের ফলাফল বিশ্লেষণ করা।
প্রকল্পের জন্য ব্যবহৃত কংক্রিট, কাঠ, অ্যাসফল্ট বা ইস্পাতের মতো নির্মাণ সামগ্রীগুলির পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করা। - প্রকল্পের অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা নির্ধারণ করার জন্য নির্মাণের উপকরণ, সরঞ্জাম, এবং শ্রমিকদের আনুমানিক খরচ নির্ধারণ করা।
- ডিজাইন ব্যবহার করে শিল্প ও সরকারী স্ট্যান্ডার্ডের সাথে সঙ্গতি রেখে পরিবহন সিস্টেম এবং কাঠামো পরিকল্পনা করা স্থাপত্য নির্মাণের জন্য স্থান, সাইট লেআউট, রেফারেন্স পয়েন্ট, গ্রেড এবং উচ্চতা সার্ভে কাজগুলোকে পরিচালনা বা তত্ত্বাবধান করা।
- সরকারী ও ব্যক্তিগত অবকাঠামোর মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ, এবং প্রতিস্থাপন পরিচালনা করা।
বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিএসসি করার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান এর মধ্যে সবচেয়ে উন্নত মানের প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ডুয়েট এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মধ্যে সবচেয়ে উন্নত মানের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা শেষে একজন শিক্ষার্থী দেশের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে বিএসসি করতে পারে।
- বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
- বিএসসি ইন আর্কিটেকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং
- বিএসসি ইন আরবান অ্যান্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং
- বিএসসি ইন এনভায়রোমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং
- ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং
- এছাড়া AMIE সার্টিফিকেট সহ বিদেশেও উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ আছে।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মক্ষেত্র
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর বেশ কয়টি শাখা যেমন-নির্মাণ প্রকৌশল, ইঞ্জিনিয়ারিং, ফায়ার প্রটেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং, জেনারেল ইঞ্জিনিয়ারিং, সেতু প্রকৌশল, ভূমি উন্নয়ন, মেটারিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, পরিবহন প্রকৌশল, হাইড্রোলিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জল সম্পদ প্রকৌশল, পরিবেশ প্রকৌশলে স্পেশালাইজড হতে পারে। তাদের লব্ধ জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে সরকারি বেসরকারি সকল অবকাঠামোগত নির্মাণ এবং প্রকল্পে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কাজ করতে পারেন। যেসব সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পে সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা কাজের সুযোগ পান সেগুলো হল-
- সড়ক ও জনপদ বিভাগ
- গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়
- রিয়েল এস্টেট
- নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
- বিভিন্ন সেতু, বাঁধ ও বন্দর নির্মাণ
- পরিবেশ নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন multinational company
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর
- জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর
- ব্যক্তিগত বাড়ি নির্মাণ
- হাইওয়ে ব্রিজ
- পানি উন্নয়ন বোর্ড
- এলজিইডি(LGED)
- রেলওয়ে
- বিআরটিএ(BRTA)
- পাওয়ার প্লান্ট
- রেলওয়ে
- সিটি করপোরেশন, পৌরসভা
- মোবাইল ফোন কোম্পানির টাওয়ার নির্মাণে
- বিভিন্ন multinational NGO তে প্রোজেক্ট প্রকৌশল হিসেবে
- নিজস্ব নির্মাণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
এছাড়া দেশের বাইরেও নির্মাণ সংক্রান্ত কর্মক্ষেত্রে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যপক চাহিদা আছে।
একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের আয়
একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ডিপ্লোমা শেষে সরকারি প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলে উপ-সহকারি প্রকৌশল হিসেবে যোগ দিলে বেতন শুরু হতে পারে ৩০,০০০ টাকা থেকে। প্রতিষ্ঠান ও পদ ভেদে এই অংক ২০ – ৪০ হাজার হতে পারে। অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বেতন বেড়ে ৫০,০০০ – ১০০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
দেশের বাইরে একজন দক্ষ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের বেতন আরও লোভনীয়। তবে এসব ক্ষেত্রে বিএসসি সম্পন্ন করা আবশ্যক।
এছাড়া কন্সালটেনসি এবং ব্যক্তিগত নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও অনেকে ক্যারিয়ার গড়ছে।
ডি ইঞ্জিনিয়ার্স নিউজ এর পোর্টালে ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সকল আপডেট সবার আগে পেতে আমাদের নিউজ পোর্টাল ভিজিট করুন এবং ফেসবুক পেজে লাইক/ফলো দিয়ে রাখুন।