চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-(চবি) চট্টগ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশের সরকারি বহু-অনুষদভিত্তিক গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলায় স্থাপিত হয়। এটি দেশের তৃতীয় এবং শিক্ষাঙ্গণ আয়তনের দিক থেকে দেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৯ সালের হিসাবে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৭,৮৩৯ শিক্ষার্থী এবং ৮৭২ জন শিক্ষক রয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-(চবি)
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে এই বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেছিল। সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিল।বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অর্ন্তভূক্ত রয়েছে।
অন্যান্য নাম: | চবি |
ধরনঃ | পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সহ-শিক্ষা |
স্থাপিতঃ | ১৮ নভেম্বর ১৯৬৬ |
উপাচার্য :
আচার্য: |
শিরীণ আখতার
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ |
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গঃ | ৮৭২ |
শিক্ষার্থী: | ২৭,৮৩৯ (ছাত্র ১৫,৫৯৮, ছাত্রী ৯,১৭৯) |
অবস্থানঃ | ফতেহপুর, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম, ৪৩৩১, বাংলাদেশ ২২.৪৭১০০২১° উত্তর ৯১.৭৮৮৪৬৯৩° পূর্ব |
প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ: | ৩১১ |
শিক্ষাঙ্গনঃ | ২,১০০ একর (৮৫০ হেক্টর) |
অধিভুক্তি: | বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন |
সংক্ষিপ্ত নাম: | চবি |
ওয়েবসাইটঃ | www.cu.ac.bd |
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস
বিশ শতাব্দীর শুরুর দিকে চট্টগ্রাম বিভাগে কোন বিশ্ববিদ্যালয় না থাকায় চট্টগ্রামের অধিবাসিরা স্থানীয়ভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন অনুভব করে । ১৯৪০ সালের ২৮ ডিসেম্বর, কলকাতায় অনুষ্ঠিত জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সর্বভারতীয় সম্মেলনে মওলানা মুনিরুজ্জামান ইসলামবাদী সভাপতির ভাষণে চট্টগ্রাম অঞ্চলে একটি ‘ইসলামিক ইউনিভার্সিটি’ নির্মাণের কথা উপস্থাপন করেন এবং একই লক্ষ্যে তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার দেয়াঙ পাহাড়ে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মানের জন্য ভূমি ক্রয় করেন। দুই বছর পর, ১৯৪২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নূর আহমদ বঙ্গীয় আইন পরিষদে চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক দাবি উত্থাপন করেন।
ষাটের দশকে তৎকালীন পাকিস্তানের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৬০-১৯৬৫) প্রণয়নকালে চট্টগ্রামে একটি ‘বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মানের স্থান হিসেবে শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত চট্টগ্রাম সরকারি কলেজকে সম্ভাব্য ক্যাম্পাস হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬২ সালে, তৎকালিন পূর্ব-পাকিস্তানের জনশিক্ষা উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফেরদাউস খান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার একটি প্রাথমিক খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করেন। একই বছর, ১৯৬২ সালের নির্বাচন প্রচারনায় ফজলুল কাদের চৌধুরী এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাধারণ প্রতিশ্রুতি দেন। এবং নির্বাচন পরবর্তীকালে তিনি কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের স্থানে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হওয়ার পর, ১৯৬১ সালের ৭ মে চট্টগ্রামের নিবাসির উদ্যোগে স্থানীয় মুসলিম হলে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রধান অতিথির ভাষণে চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত প্রকাশ করেন এবং তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। পরবর্তীকালে ১৯৬২ সালে ৩০ ডিসেম্বর, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদ’ নামে আরেকটি পরিষদ গঠিত হয়। এই সকল সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ ও স্মারকলিপি প্রদান, পত্রপত্রিকায় বিবৃতি, সেমিনার অনুষ্ঠিত হতে থাকে। সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ১৯৬২ সালের ৯ ডিসেম্বর লালদিঘী ময়দানে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৩ সালের ৮ জানুয়ারি, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়।
১৯৬৩ সালের ২৯ নভেম্বর, ফজলুল কাদের চৌধুরী পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার মনোনীত হন। প্রথমদিকে এ বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালিতে স্থাপনের পরিকল্পনা করা হলেও ১৯৬৩ সালের ১২ ডিসেম্বর, রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের অনুপস্থিতিতে মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে সভাপতিত্বকালে ফজলুল কাদের চৌধুরী কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী এ.টি.এম মোস্তফাকে বিশ্ববিদ্যালয়টি কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
অবস্থান
এটি চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার (১৪ মা) উত্তরে হাটহাজারী থানার ফতেহপুর ইউনিয়নের জঙ্গল পশ্চিম-পট্টি মৌজার ২,১০০ একর (৮৫০ হেক্টর) একর পাহাড়ি এবং সমতল ভূমির উপর অবস্থিত। পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন ছিল ১,৭৫৩.৮৮ একর (৭০৯.৭৭ হেক্টর), যা পরবর্তীতে ২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রায় ৯ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সীমানা প্রাচীর নিমার্ণের মাধ্যমে বর্ধিত করা হয়।
বিস্তারিত দেখুন গুগল ম্যাপে
যোগাযোগের ঠিকানা হল-
- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
- ফতেহপুর, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম, ৪৩৩১, বাংলাদেশ
- যোগাযোগ :726311-14, 2606001-10, 2606915-27
- ইমেইল :registrarcu66@cu.ac.bd
- ওয়েবসাইট :www.cu.ac.bd
চবি এর অনুষদ এবং বিভাগসমূহ
২০২০সালের হিসেবে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯টি অনুষদের অধীনে ৫৪টি বিভাগ রয়েছে।
অনুষদ | স্থাপিত | বিভাগ |
---|---|---|
কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ | ১৯৬৬ | ১৪ |
আইন অনুষদ | ১৯৬৬ | ০১ |
বিজ্ঞান অনুষদ | ১৯৬৯ | ০৫ |
ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ | ১৯৭০ | ০৬ |
প্রকৌশল অনুষদ | ২০০১ | ০২ |
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ | ১০ | |
জীব বিজ্ঞান অনুষদ | ০৯ | |
শিক্ষা অনুষদ | ০১ | |
চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুষদ | ০১ | |
মেরিন সায়েন্স ও ফিশারিজ অনুষদ | ২০১৯ | ০২ |
ইনস্টিটিউটসমূহ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৭টি ইনস্টিটিউট রয়েছে।
- শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট
- ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স
- চারুকলা ইনস্টিটিউট
- কমিউনিটি ওফথমোলজি ইনস্টিটিউট
- আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট
- বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট
- সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউট
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হলসমূহ
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে ১২টি আবাসিক হল রয়েছে যার মধ্যে ৮টি ছাত্র হল ও ৪টি ছাত্রী হল। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে ১টি হোস্টেল রয়েছে।
ছাত্র হল
|
ছাত্রী হল
ছাত্রাবাস
|
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর লাইব্রেরি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ গ্রন্থাগার যা দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই গ্রন্থাগারে বর্তমান সংগ্রহ সংখ্যা প্রায় ৩.৫ লক্ষ যার মধ্যে রয়েছে বিরল বই, জার্নাল, অডিও-ভিজ্যুয়াল উপাদান, পান্ডুলিপি এবং অন্ধদের জন্য ব্রেইল বই। ১৯৬৬ সালের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোবধনের সাথে এই গ্রন্থাগারের যাত্রা শুরু হয় মাত্র ৩০০ বই নিয়ে। লাইব্রেরি বর্তমান ভবনে স্থানান্তরিত হয় ১৯৯০ সালের নভেম্বরে। তিনতলা বিশিষ্ট গ্রন্থাগারটিতে শিক্ষার্থী, গবেষক এবং শিক্ষকদের জন্য পৃথক কক্ষ রয়েছে। গ্রন্থাগার ভবনে একটি মিলনায়তনও রয়েছে।
চবি এর যাতায়াত
বিশ্ববিদ্যালয় শাটল ট্রেন
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে বাস এবং মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা।
শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ১০টি বগি বিশিষ্ট দুইটি শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার শিক্ষার্থী শাটল ট্রেনে যাতায়াত করে থাকে। বর্তমানে ট্রেন দুইটি দৈনিক সাতবার চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ও ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন থেকে পুনরায় বটতলি ও ষোলশহর স্টেশন পর্যন্ত নির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী যাতায়াত করে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্রসমূহ
বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৬টি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে।
- জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র
- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার ফর বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
- নজরুল গবেষণা কেন্দ্র
- ব্যুরো অব বিজনেস রিসার্চ
- সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র
- সেন্টার ফর এশিয়ান স্টাডিস
অধিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে বর্তমানে ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংগঠন
সাংস্কৃতিক
- বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী – চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ
- লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন
- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চ
- সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন
- চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র
- চবি বন্ধুসভা
- উত্তরায়ণ সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদ
- অঙ্গন, চবি
বিজ্ঞান
- প্রগতি বিজ্ঞান আন্দোলন
- বাংলাদেশ ওপেন সায়েন্স অর্গানাইজেশন
- বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ
- চবি অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশন
রাজনৈতিক
- বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা
- জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
- বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
- বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন
- সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট
- বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
- ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন
ডি ইঞ্জিনিয়ার্স নিউজ এর পোর্টালে ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সকল আপডেট সবার আগে পেতে আমাদের নিউজ পোর্টাল ভিজিট করুন এবং ফেসবুক পেজে লাইক/ফলো দিয়ে রাখুন।