ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এখন সবাই অনলাইনের মাধ্যমে কিছু শেখার জন্য চেষ্টা করে। বর্তমানে প্রায় সবার হাতেই একটা করে স্মার্টফোন রয়েছে,যার মাধ্যমে ঘরে বসে অনেক কিছু সম্পর্কে জানতে পারে। সবাই যেন ঘরে বসে ভালো কিছু শিখতে পারে ,এজন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন এবং প্রশ্নের উত্তর এবং বিভিন্ন প্রকার নিউজ দিয়ে থাকি। আজকে ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করব ।
ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ নিচে দেওয়া হল:
১) ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট কাকে বলে?
উত্তরঃ যে পথ দিয়ে বা যে মাধ্যমে সহজেই বিদ্যুৎ চলাচল করে লােডের মধ্যে দিয়ে তার কার্য সম্পাদনা করে অন্য একটি পথে ফিরে আসতে পারে তাকে ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট বা বর্তনী বলে।
২) ওহমের সূত্রের সীমাবদ্ধতাগুলো কি?
উত্তরঃ ওহমের সূত্রের সীমাবদ্ধতাঃ
ক) ওহমের সূত্র শুধুমাত্র ডিসি সার্কিটে প্রয়োগ করা যায়, এসি সার্কিটের জন্য প্রযোজ্য নয়।
খ) ওহমের সূত্র দ্বারা জটিল সার্কিটগুলো সমাধান করা যায় না।
গ) ওহমের সূত্র প্রয়োগ করতে হলে তাপমাত্রা স্থির থাকতে হবে অর্থাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তন হলে ওহমের সূত্র প্রযােজ্য হয় না।
৩) ওহমের সূত্রটি বিবৃত কর ?
উত্তরঃ ওহমের সূত্রের বিবৃতি: “নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোন একটি পরিবাহীর মধ্য দিয়ে যে কারেন্ট প্রবাহিত হয় তা পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্যের সমানুপাতিক এবং রেজিস্ট্যান্সের ব্যাস্তানুপাতিক।“
অর্থাৎ,
পরিবাহির দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য যদি V ভোল্ট হয় এবং রেজিস্ট্যান্স যদি R ওহম হয়, তাহলে ওহমের সূত্রানুসারে, কারেন্ট, I = V / R
এখানে,
I = কারেন্ট (অ্যাম্পিয়ার),
V = ভোল্টেজ বা বিভব (ভোল্ট),
R = রেজিস্ট্যান্স বা রোধ (ওহম)।
৪) রেজিস্ট্যান্সের একক কি?
উত্তরঃ রেজিস্ট্যান্সের একক হচ্ছে ওহম (Ω) এবং একে r অথবা R দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
৫) রেজিস্ট্যান্স (Resistance) বা রোধ কাকে বলে?
উত্তরঃ কোন পরিবাহী পদার্থের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ চলাচলের সময় বিদ্যুৎ চলাচলে যে বাধাঁ সৃষ্টি করে তাকে Resistance বা রোধ বলা হয়। বিদ্যুৎ চলাচলে যে বাধাঁ প্রদান করে তাকেই Resistance বলে ।
ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
৬) ভোল্টেজের একক কি?
উত্তরঃ ভােল্টেজের একক হচ্ছে ভােল্ট (Volt) এবং একে V দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
৭) ভােল্টেজ কাকে বলা হয়?
উত্তরঃ কোন পরিবাহী পদার্থের পরমানুর মুক্ত ইলেকট্রনসমূহকে স্থানচ্যুত করতে বা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠাতে যে বল বা চাপের প্রয়ােজন হয় তাকে ভােল্টেজ বলা হয়। ইলেকট্রনকে স্থানচ্যুত করার চাপকে ভোল্টেজ বলে।
৮) কারেন্টকে কি দ্বারা প্রকাশ করা হয়?
উত্তরঃ কারেন্টকে i বা I দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
৯) কারেন্টের একক কি?
উত্তরঃ কারেন্টের একক হচ্ছে অ্যাম্পিয়ার (A) অথবা Amp অথবা কুলম্ব/সেকেন্ড।
১০) কারেন্ট (current) কি?
উত্তরঃ কোন পরিবাহীর মধ্য দিয়ে মুক্ত ইলেকট্রনসমূহের নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হওয়ার হারকে কারেন্ট বলে। ইলেকট্রনের প্রবাহই হচ্ছে কারেন্ট।
ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
১১) এসি রেজিস্ট্যান্স কাকে বলে?
উত্তরঃ এসি রেজিস্ট্যান্সঃ এসি সার্কিটে কোন পরিবাহীর ওহমিক রেজিস্ট্যান্স, স্কিন ইফেক্ট, এডি কারেন্ট লস ও ডাই ইলেক্ট্রিক সম্মিলিত বাধাকে এসি রেজিস্ট্যান্স বলে। এসি রেজিস্ট্যান্সকে কার্যকরী রেজিস্ট্যান্স বলা হয়ে থাকে।
১২) ওহমিক রেজিস্ট্যান্স বলতে কি বুঝায়?
উত্তরঃ ওহমিক রেজিস্ট্যান্সঃ কোন পরিবাহী ডিসি কারেন্ট প্রবাহ করার সময় যে বাধা দিয়ে থাকে তাকে ওহমিক রেজিস্ট্যান্স বলে। ওহমিক রেজিস্ট্যান্সকে ডিসি রেজিস্ট্যান্সও বলা হয়।
১৩) ভোল্ট মিটারকে প্যারালাল ও এমিটারকে সিরিজে সংযোগ দেওয়া হয় কেনো?
উত্তরঃ
ভোল্ট মিটারঃ ভোল্ট মিটারের মাধ্যমে কোনো লাইনের বা লোডের ভোল্টেজ পরিমাপ করা হয়। লোডের সাথে এটি প্যারালালে সংযোগ করার কারণ হচ্ছে এর Internal Resistance অনেক বেশি।
এমিটারঃ এমিটার দ্বারা কোন বৈদ্যুতিক লাইনের বা লোডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কারেন্টকে মাপা হয়। এটি লোডের সাথে সিরিজে সংযোগ দিতে হয় কারণ এর Internal Resistance আবার খুবই কম অথবা শূন্য হয়।
১৪) ভোল্ট মিটার ও এমিটারকে সিরিজ নাকি প্যারালাল সংযোগ দেওয়া হয় ?
উত্তরঃ ভোল্ট মিটারকে প্যারালাল ও এমিটারকে সিরিজে সংযোগ দেওয়া হয়।
১৫) লোড কি?
উত্তরঃ যে সকল ডিভাইস ব্যাটারি, জেনারেটর বা কোন সোর্স থেকে পাওয়ার Consume করে প্রত্যাশিত কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে তাদেরকে লোড বলে।
ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
১৬) Voltage Source কি?
উত্তরঃ Current Source-এর ন্যায় Voltage Source এমন একটি উৎস যার লোড বা রেজিস্ট্যান্স পরিবর্তন হলেও ওই উৎস নির্দিষ্ট পরিমানই ভোল্টেজ সরবরাহ করতে থাকে।
১৭) Current Source কি?
উত্তরঃ Current Source এমন একটি উৎস যার লোড বা রেজিস্ট্যান্স পরিবর্তন হলেও ওই উৎস নির্দিষ্ট পরিমান কারেন্টই সরবরাহ করতে থাকে।
১৮) প্যারালাল সার্কিটের কয়েকটি সুবিধা কি কি ?
উত্তরঃ প্যারালাল সার্কিটের কয়েকটি সুবিধা হলোঃ
- প্রতিটি লােডকে আলাদা আলাদা সুইচ দ্বারা নিয়ন্ত্রন করা যায়।
- সার্কিটে একটি লোড নষ্ট হয়ে গেলে অন্যান্য লোডগুলোর উপর কোন প্রভাব পড়েনা অর্থাৎ অন্যান্য লোডগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে পারে।
- প্রতিটি লোডের আড়াআড়িতে সমান ভোল্টেজ প্রয়োগ হয় যার ফলে সকল লোড সমানভাবে কাজ করতে পারে।
১৯) সিরিজ সার্কিটের অসুবিধা কি?
উত্তরঃ সিরিজ সার্কিটের অসুবিধাগুলো হলােঃ
- প্রতিটি লােডকে আলাদা আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রন করা যায় না।
- যেকোন একটি লােড নষ্ট হয়ে গেলে অবশিষ্ট সকল লােডগুলোও অকেঁজো হয়ে পড়ে।
- প্রতিটি লােডের আড়াআড়িতে ভােল্টেজ ড্রপ হয়, যার ফলে সকল লােড সমান ভাবে কাজ করতে পারে না।
২০) বাসা বাড়িতে কোন ধরনের সার্কিট ব্যবহার করা হয় এবং কেনো?
উত্তরঃ বাসা বাড়িতে সাধারণত প্যারালাল সার্কিট ব্যবহার করা হয় কারণ প্যারালাল সার্কিটের প্রতিটি লোডই সরবরাহকৃত ভোল্টেজের সমান ভোল্টেজ পায়।
ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
২১) ডিসি সার্কিট (DC Circuit) বলতে কি বুঝ?
উত্তরঃ DC = Direct Current. ডিসি সোর্সের মাধ্যমে যে সকল সার্কিট কার্য সম্পাদন করে তাদেরকে DC Circuit বলে।
২২) সিরিজ-প্যারালাল বা মিশ্র সার্কিট কাকে বলে?
উত্তরঃ যে সকল সার্কিটে সিরিজ ও প্যারালাল উভয় সার্কিটের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে বা মিশ্র অবস্থায় থাকে, তাকে সিরিজ-প্যারালাল বা মিশ্র সার্কিট বলে।
২৩) প্যারালাল সার্কিটের বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি?
উত্তরঃ প্যারালাল সার্কিটের বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
১. প্যারালাল সার্কিটে প্রয়োগকৃত মোট ভোল্টেজ হচ্ছে সার্কিটে সংযুক্ত প্রতিটি লােডের আড়াআড়িতে ভােল্টেজসমূহের সমান।
VT = V1 = V2 = V3
২. প্যারালাল সার্কিটে প্রবাহিত মোট কারেন্ট হচ্ছে সার্কিটে সংযুক্ত প্রতিটি লােডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কারেন্টের যােগফল।
অর্থাৎ, IT = I1 = I2 =I3
৩. প্যারালাল সার্কিটে সংযুক্ত প্রতিটি রেজিষ্ট্যান্সের মান উল্টোভাবে যােগ করলে যােগফল সমতুল্য রেজিষ্ট্যান্সের উল্টানাে মানের সমান।
২৪) প্যারালাল সার্কিট কাকে বলে?
উত্তরঃ যে সকল সার্কিটে কারেন্ট প্রবাহের জন্য দুই বা ততােধিক পথ থাকে, তাকে প্যারালাল সার্কিট বলে।
২৫) সিরিজ সার্কিটের বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি?
উত্তরঃ সিরিজ সার্কিটের বৈশিষ্ট্যগুলোঃ
১. সিরিজ সার্কিটে প্রবাহিত মোট কারেন্ট হচ্ছে প্রতিটি লােডের আড়াআড়িতে প্রবাহিত কারেন্টের সমান। অর্থাৎ, IT = l1 = I2 = I3
২. সিরিজ সার্কিটে প্রবাহিত মােট ভােল্টেজ হচ্ছে সার্কিটে সংযুক্ত প্রতিটি লােডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ভােল্টেজের যােগফলের সমান। অর্থাৎ, VT = V1 + V2 + V3
৩. সিরিজ সার্কিটে সমতুল্য রেজিস্টেন্স এর সকল রেজিস্টেন্সের যােগফলের সমান।
অর্থাৎ, RT = R1 + R2 + R3
ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
২৬) সিরিজ সার্কিট কাকে বলে?
উত্তরঃ যে সকল সার্কিটে কারেন্ট প্রবাহের জন্য একটি মাত্র পথ থাকে, তাকে সিরিজ সার্কিট বলে।
২৭) সার্কিট বা বর্তনী কত প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ সার্কিট বা বর্তনীকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়, যথা-
ক) সিরিজ সার্কিট
খ) প্যারালাল সার্কিট
গ) সিরিজ-প্যারালাল বা মিশ্র সার্কিট
২৮) আদর্শ সার্কিটের উপাদান কয়টি ও কি কি?
উত্তরঃ আদর্শ সার্কিটের উপাদান ৫ টি।, যথাঃ
- বৈদ্যুতিক সোর্স (Source)
- পরিবাহী (Conductor)
- নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা সুইচ (Switch)
- লােড (Load)
- রক্ষন যন্ত্র (Protecting Device)
২৯) আদর্শ সার্কিট কি?
উত্তরঃ একটি আদর্শ সার্কিটে ৫ টি components বা উপাদান থাকে। যদি কোন সার্কিটে এই ৫ টি উপাদান বা components বিদ্যমান থাকে তখন ঐ সার্কিটকে আদর্শ সার্কিট বলা হয়।
ডি ইঞ্জিনিয়ার্স নিউজ এর পোর্টালে ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সকল আপডেট সবার আগে পেতে আমাদের নিউজ পোর্টাল ভিজিট করুন এবং ফেসবুক পেজে লাইক/ফলো দিয়ে রাখুন।