মাদারবোর্ড কি? কত প্রকার ও কি কি?। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এখন সবাই অনলাইনের মাধ্যমে কিছু শেখার জন্য চেষ্টা করে। বর্তমানে প্রায় সবার হাতেই একটা করে স্মার্টফোন রয়েছে,যার মাধ্যমে ঘরে বসে অনেক কিছু সম্পর্কে জানতে পারে। সবাই যেন ঘরে বসে ভালো কিছু শিখতে পারে ,এজন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন এবং প্রশ্নের উত্তর এবং বিভিন্ন প্রকার নিউজ দিয়ে থাকি। আজকে মাদারবোর্ড নিয়ে আলোচনা করব । মাদারবোর্ড হল ব্যক্তিগত কম্পিউটারের মতো জটিল ইলেকট্রনিক সিস্টেম এর মূল সার্কিট বোর্ড (পিসিবি)। মাদরবোর্ডকে কখনও কখনও মেইনবোর্ড বা সিস্টেম বোর্ড -ও বলা হয়। তবে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে এটিকে লজিকবোর্ড বলা হয়। মাদারবোর্ডের মাধ্যমে কম্পিউটারের সকল যন্ত্রাংশকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করা হয়।
মাদারবোর্ড কি? কত প্রকার ও কি কি?
সাধারণ ডেস্কটপ কম্পিউটারে মাদারবোর্ডের সাথে মাইক্রোপ্রসেসর, প্রধান মেমরি ও কম্পিউটারের অন্যান্য অপরিহার্য ছোট ছোট যন্ত্রাংশগুলি যুক্ত থাকে। অন্যান্য অংশের মধ্যে আছে শব্দ ও ভিডিও নিয়ন্ত্রক, অতিরিক্ত তথ্যভান্ডার, বিভিন্ন প্লাগইন কার্ড যেমন ল্যান কার্ড ইত্যাদি। কি-বোর্ড,মাউস, প্রিন্টারসহ সকল ইনপুট-আউটপুট যন্ত্রাংশও মাদারবোর্ডের সাথে যুক্ত থাকে।
কম্পিউটার চালনার মূল নিয়ামক হচ্ছে এই মাদারবোর্ড। প্রযুক্তিবিদদের কাছে এটা অজ্ঞাত নয় যে- কোনো পরিবারে একজন দায়িত্ববান মা ছাড়া যেমন সংসারটা অচল, মাদারবোর্ড ছাড়া তেমনি কম্পিউটার অচল। তাই একে মায়ের সাথে তুলনা করা হয়। এছাড়া এর সাথে সংযুক্ত যন্ত্রাংশগুলিকে সেই মায়ের বুকে আগলে থাকা অতি আদরের সন্তানদের সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। হয়তো এখানেই মাদারবোর্ড নামের স্বার্থকতা।
মাদারবোর্ড প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসুস, গিগাবাইট, ইন্টেল, ইসিএস ইত্যাদি। আসুস বর্তমানে পৃথিবীর সব চেয়ে বড় মাদারবোর্ড প্রস্তুতকারক কোম্পানি।
আরো দেখুন
ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের ভাইভা পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সমূহ
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সরকারি চাকরির ক্ষেত্র সমূহ
পাওয়ার প্ল্যান্ট চাকরির প্রস্তুতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
মাদারবোর্ড সম্পর্কে বিস্তারিত
কম্পিউটারের জগতে প্রথম মাদারবোর্ড হিসাবে ১৯৮১ সালে রিলিজ হওয়া আই.বি.এম পার্সোনাল কম্পিউটারের মাদারবোর্ড কে কম্পিউটার জগতের প্রথম মাদারবোর্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তখন অবশ্য আই.বি.এম কোম্পানী এটার নাম দিয়েছিল প্লানার। মাদারবোর্ডের আরো অন্যান্য অনেক নাম রয়েছে যেমন, এমবি, বেস বোর্ড, মোবো, মেইন বোর্ড, মেইন সার্কিট বোর্ড, এম-বোর্ড, সিস্টেম বোর্ড, প্ল্যানার বোর্ড, লজিক বোর্ড ইত্যাদি। কম্পিউটারের সাইজ ও টাইপের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরণের মাদারবোর্ড রয়েছে।
কম্পিউটার মাদারবোর্ড এর ছবি
আপনাদের সুবিধার্থে মাদারবোর্ড এর একটা পরিপূর্ণ ছবি দেওয়া হলো আশা করছি আপনারা যারা মাদারবোর্ড দেখেন নি তাদের ছবিটা দেখলে অনেক উপকারে আসবে। অনেক কিছু বুঝতে পারবেন।

মাদারবোর্ড কত প্রকার ও কি কি?
মাদারবোর্ড প্রধানত দুই প্রকার। যথাঃ
- Integrated Motherboard
- Non-Integrated Motherboard
Integrated Motherboard: যে মাদারবোর্ডে আপনি নতুনভাবে কোন সিস্টেম আপডেট করতে পারবেন তাকে Integrated Motherboard। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক কি রকম? যেমন ধরুন, পিসি, ল্যাপটপের মাদারবোর্ডে আপনি চাইলেই SSD, গেম কার্ড, গ্রাফিক্স কার্ড এড করতে পারবেন। এজন্য কম্পিউটার, ল্যাপটপের মাদারবোর্ডকে ইন্টিগ্রেডেড মাদারবোর্ড বলে।
Non-Integrated Motherboard: ইন্টিগ্রেডেড মাদারবোর্ডকে একটু উল্টো করে ভাবুন। এমন কোন ডিভাইস আছে যার মাদারবোর্ডে আপনি এক্সট্রা কোন হার্ডওয়্যার বা স্লট ইন্টিগ্রেড করতে পারবেন না? উত্তরে নিশ্চয়ই বলবেন মোবাইল, ট্যাব। হ্যা, মোবাইলে আমরা চাইলেই গ্রাফিক্স কার্ড, গেম কার্ড, এস এস ডি এড করতে পারিনা। তাই মোবাইলের মাদারবোর্ডকে বলা হয় নন-ইন্টিগ্রেডেড মাদারবোর্ড।
এছাড়া কম্পিউটারের মাদারবোর্ড পাঁচ প্রকারের হয়ে থাকে। যেগুলোকে তাদের মার্কেট লেভেল, উৎপাদন, ব্যবহার আকার ও ক্ষমতার উপর নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন-
- মিনি আইটিএক্স মাদারবোর্ড (Mini ITX)।
- ন্যানো আইটিএক্স মাদারবোর্ড (Nano ITX)।
- পিকো আইটিএক্স মাদারবোর্ড (Pico ITX)।
- স্ট্যান্ডার্ড এটিএক্স মাদারবোর্ড (Standard ATX)।
- মাইক্রো এটিএক্স মাদারবোর্ড (Micro ATX)।
মাদারবোর্ডের বিভিন্ন অংশের নাম
মাদারবোর্ড নিম্নলিখিত অংশ নিয়ে গঠিতঃ
- RAM চিপ
- ROM চিপ
- CPU চিপ
- PCI স্লট
- গ্রাফিক্স পোর্ট
- ভিডিএ কানেক্টিং পোর্ট
- ইন্টারনেট ল্যান পোর্ট
- সিরিয়াল পোর্ট
- প্যারালাল পোর্ট
- পাওয়ার সাপ্লাই কানেক্টর
- নর্থব্রীজ এবং সাউথব্রীজ
- PS2 পোর্ট
- FDC পোর্ট
- IDE পোর্ট
- CMOS ব্যাটারি
RAM চিপ
র্যাম এক ধরনের মেমোরি ডিভাইস। RAM এর পূর্ণরুপ হল Random Access Memory। আপনার ল্যাপটপে ডাউনলোড করা সফটওয়্যার, বিভিন্ন তথ্য এবং মেশিন কোডগুলো র্যামের মধ্যে অস্থায়ীভাবে সংরক্ষিত থাকে। কাজেই একে Temporary Memory Element ও বলা হয়। র্যামের সাইজ বা স্পেস যত বেশি হবে তখন তার বহুবিধ কাজ করার প্রবণতাও বেড়ে যাবে।
ROM চিপ
যারা যারা র্যামের কাজ বুঝেছেন তাদের কাছেও রোম বুঝাটাও অনেক সহজ হবে। রোম ও র্যামের মতই মেমোরি ডিভাইস কিন্তু র্যামের উলটা কাজটাই করে রোম। র্যাম যেকোন ডাটাকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করে আর পক্ষান্তরে রোম ডাটাকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করে।
সি পি ইউ চিপ
সি পি ইউ এর পূর্ণরুপ হল সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট। মানুষের মস্তিষ্ক যেমন সকল প্রকার কার্যাবলির নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে তেমনি কম্পিউটারের সকল ফাংশনের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হল সেন্টাল প্রসেসিং ইউনিট। মাদারবোর্ডের সি পি ইউ চিপ থাকে যা কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রকার সফটওয়্যার, ফাংশন কার্যকর করতে সাহায্য করে।
মাদারবোর্ডের বিভিন্ন পোর্ট
আপনি যদি কম্পিউটারের একটা মাদারবোর্ড দেখেন সেখানে দেখতে পাবেন বিভিন্ন পোর্ট ও কানেক্টর রয়েছে যেগুলোতে র্যাম, হার্ডডিস্ক, গ্রাফিক্স, মেমোরি লাগানো যায়। যেমন-
সিরিয়াল পোর্ট
মাদারবোর্ডে দুইটি সিরিয়াল পোর্ট দেখা যায়। সাধারণত সিরিয়াল পোর্ট ৯ এবং ১০ পিনের হয়ে থাকে। এটা মেইল এবং ফিমেইল উভয় প্রকার হতে পারে। সিরিয়াল পোর্ট এর মাধ্যমে মাউস এবং মডেমের সংযোগ দেওয়া হয়।
প্যারালাল পোর্ট
প্যারালাল পোর্টকে লাইন প্রিন্টার পোর্ট বলা হয়। সাধারণত প্রিন্টার সংযোগ দেয়া হয় বলে ধারণের পোর্টকে প্যারালাল পোর্ট বালা হয়। এ পোর্ট ২৬ পিনের হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে প্রিন্টার, স্ক্যানার ইত্যাদি সংযোগ প্রদান করার কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে বর্তমানের প্রিন্টার সব ইউএসবি বলে এখনকার মাদারবোর্ড প্যারালাল পোর্ট ব্যবহার করা হয় না।
মাদারবোর্ডের PS2 পোর্ট
PS2 পোর্ট সাধারণত মাউস এবং PS2 কিবোর্ডের সংযোগের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটার কানেক্টর দেখতে গোল আকৃতির যা মাদারবোর্ডের সবার উপরে থাকে। ইউএসবি মাউস কিবোর্ডের তুলনায় PS2 পোর্টের মাউসে এবং কিবোর্ডে অনেক বেশি ফ্যাসালিটি ফংশন কাজ করে। বর্তমানে PS2 মাউস এবং কিবোর্ডের ব্যবহার নেই বলেলেই চলে।
Internet LAN পোর্ট
কম্পিউটারে হাই ব্যান্ডউইথ এর ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য এক ধরনের পোর্ট থাকে। যার নাম ইন্টারনেট ল্যান পোর্ট। এই ল্যান পোর্টটি দেখতে চতুর্ভুজাকৃতির। রাউটারের RJ45 কানেক্টর এই ল্যান পোর্টে সংযোগ করা যায়।
মনিটর ভিডিএ কানেক্টর পোর্ট
প্রতিটা মাদাবোর্ডের সাথে ডিসপ্লে লাগানোর জন্য একটা ভিজিএ পোর্ট থাকে যেখানে আপনি মনিটর ব্যবহার করে সকল কাজ দেখতে পারবেন। মনিটরের কাজ সাধানত দেখা হয়ত সবাই জানেন। আপনি চাইলে পিসিআই স্লট ব্যবহার করে অতিরিক্ত ভিজিএ কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।
মাইক্রোফোন কানেক্টর পোর্ট
যেকোন অডিও রেকডিং করা বা পিসিতে সরাসরি কথা বলার জন্য মাইক্রোফোন লাইন দেওয়া থাকে। মাইক্রোফোন কানেক্টর পোর্ট কালার গোলাপি হয়ে থাকে। যেখানে সরাসরি মাক্রোফোন ব্যবহার করে রের্কডিং করতে পারবেন।
মাদারবোর্ডে সাধারণত কি কি থাকে:
- ইনডাক্টর।
- হিট সিংক।
- ক্যাপাসিটর।
- নর্থব্রিজ।
- সাউথব্রিজ।
- স্ক্রু হোল।
- সিপিইউ সকেট।
- ইউএসবি হেডার।
- রেইড।
- এফডব্লিউএইচ।
- সিডি-ইন।
- জাম্পারস্।
- মেমোরি স্লট।
- ব্যাক পেন কানেক্টর।
- ফ্লপি কানেকশন।
- ফোর পিন পাওয়ার কানেক্টর।
- থ্রি পিন কেস পেন কানেক্টর
- সিস্টেম প্যানেল কানেক্টর
- ২৪ পিন এটিএক্স পাওয়ার সাপ্লাই কানেক্টর
- এটিএ/ আইডিই ডিস্ক ড্রাইভ প্রাইমারি কানেকশন
- এক্সপেনশন স্লটস্ (পিসিআই এক্সপ্রেস, এজিপি)
- সিরিয়াল পোর্ট কানেক্টর, ইত্যাদি।
আরো দেখুন
এসি কারেন্ট নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
বিদ্যুৎ কাকে বলে বিদ্যুৎ কত প্রকার ও কি কি
সার্কিট বেকার কাকে বলে । সার্কিট ব্রেকার কিভাবে কাজ করে
ডি ইঞ্জিনিয়ার্স নিউজ এর পোর্টালে ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সকল আপডেট সবার আগে পেতে আমাদের নিউজ পোর্টাল ভিজিট করুন এবং ফেসবুক পেজে লাইক/ফলো দিয়ে রাখুন।