সাইবার বুলিং কি ,সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করনীয় কি ?। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এখন সবাই অনলাইনের মাধ্যমে কিছু শেখার জন্য চেষ্টা করে। বর্তমানে প্রায় সবার হাতেই একটা করে স্মার্টফোন রয়েছে,যার মাধ্যমে ঘরে বসে অনেক কিছু সম্পর্কে জানতে পারে। সবাই যেন ঘরে বসে ভালো কিছু শিখতে পারে ,এজন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন এবং প্রশ্নের উত্তর এবং বিভিন্ন প্রকার নিউজ দিয়ে থাকি। আজকে সাইবার বুলিং কি ,সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করনীয় কি ? এসব নিয়ে আলোচনা করব ।
সাইবার বুলিং কি ,সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করনীয় কি ?
সাইবার বুলিং হচ্ছে একধরনের সাইবার অপরাধ। বর্তমান সময়ে এ অপরাধ ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করছে। সাধারন অর্থে বুলিং বলতে আমরা বুঝি দুইজন মানুষের মধ্যে উত্ত্যপ্ত বাক্য বিনিময় বা কাউকে কটুক্তি করাকে। তেমনিভাবে ইন্টারনেট কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাউকে উদ্দেশ্য করে কটুক্তি করা বা কাউকে মানহানিকর মন্তব্য করে তাকে হেয়প্রতিপন্ন করাকেই সাইবার বুুলিং বলা হয়।
তেমনিভাবে কারো ছবি বা ভিডিওচিত্র বিকৃত ও মানহানিকর ভাবে উপস্থাপন করাকেও সাইবার বুলিং বলা হয়। বর্তমান সময়ে এই অপরাধটি ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করায় অপরাধ বিজ্ঞানীগন বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখছেন ও দ্রুত যথাযত ব্যাবস্থা ও কঠোর আইন প্রনয়নের পরামর্শ প্রদান করেছেন।
সাইবার বুলিং কি
সাইবার বুলিং হচ্ছে একটি ইংরেজী শব্দ। “সাইবার” (cyber) শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, “অনলাইন জগৎ” অর্থাৎ সাইবার শব্দটি দ্বারা অনলাইনে যত প্রকার কর্মকাণ্ড সংগঠিত হয়ে থাকে তাকে বোঝানো হয়। এবং বুলিং (bullying) শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কাউকে অপ্রত্যাশিত আক্রমণ এবং সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা। বুলিং শব্দটি এসেছে “বুলিজম” শব্দটি থেকে। বুলিজম” শব্দটির অর্থ হচ্ছে, দুজন ব্যক্তির মধ্যে তর্ক বা কথা কাটাকাটির কারণে কোনো ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্টভাবে সামাজিকভাবে হেয় করাকে বুলিজম বলা হয়।
সাইবার বুলিং এর বৈশিষ্ট্য
সাইবার বুলিং বা ভার্চুয়াল হয়রানি একটি আক্রমণাত্মক এবং ইচ্ছাকৃত কাজ যা বারবার সম্পাদিত হয়, কোনও গোষ্ঠী বা কোনও ব্যক্তির দ্বারা। মূলত ভার্চুয়াল এই দুনিয়ায় খুব সহজেই চাইলে নিজের পরিচয় গোপন রাখা যায়। যার জন্য প্রতিনিয়িত সাইবার বুলিংএর শিকার হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিরা।
বাংলাদশে সাইবার বুলিং সবথেকে বেশি আক্রমণের শিকার হচ্ছে নারীরা। স্ট্যাটিস্টা তথ্য মতে বাংলাদেশের শতকরা ৭৬ শতাংশ নারী বিভিন্ন সময় আনলাইনে সাইবার বুলিংএর শিকার হচ্ছেন।
কোন ধরনের অপরাধকে সাইবার বুলিং বলা হয়
সাইবার বুলিং বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, বিশেষত সাইবার বুলিং এর শিকার হয়ে থাকে কিশোর-কিশোরী এবং নারীরা। যেমন বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ায় বাজে ভাবে মেসেজ পাঠানো। আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও পাঠানো। ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি আপলোড করা হলে পরে সেগুলো নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার এর মাধ্যমে অশ্লীল ছবিতে রুপান্তর করে হয়রানির শিকার করা। সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা। এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে সাইবার বুলিং এর শিকার হয়ে থাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৩০ বছর এর নিচের বয়সী নারীরা।
অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় সাইবার বুলিং এর মাধ্যমে হয়রানির শিকার করে অর্থ লোপাটের ঘটনাও ঘটে থাকে। এবং এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সমাজের মানুষ। তারা এটা জেনেও যে এক্ষেত্রে ভিকটিমের কোন দোষ নেই তারপরেও বিভিন্ন ধরনের উস্কানিমূলক কথাবার্তা ছড়িয়ে বেড়ায়। যারা সাইবার বুলিং এর শিকার একজন মানুষকে আরো মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলে। এক্ষেত্রে অনেকের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতাও সৃষ্টি হতে পারে।
সাইবার বুলিং এর বেশি শিকার হয় কারা
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে নিয়মিত সাইবার বুলিং, আপত্তিকর মন্তব্য কিংবা হয়রানির শিকার হয়। ইউনিসেফের ২০১৯ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, দেশে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়া ৩৮ শতাংশ মানুষের বয়স ১০ থেকে ১৩ বছর; ৩৬ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ১৫ বছর এবং ২৫ শতাংশের বয়স ১৬ থেকে ১৭ বছর।
ঢাকায় অনলাইনে হয়রানির শিকার নারীদের ৭০ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। বাংলাদেশসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশের ওপর চালানো এক জরিপের বরাত দিয়ে ২০১৭ সালে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়-এসব দেশে সাইবার বুলিংয়ের ঝুঁকি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এবং নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীরা সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে বুলিংয়ের।
অনলাইনে হয়রানি বা সাইবার বুলিংয়ের কারণে অনেকেই হতাশায় ভোগে। তাদের একটি অংশ হতাশা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এরকম দুটি উদাহরণ তুলে ধরতে চাই।
জাপানের ২২ বছর বয়সি হানা কিমুরা একজন পেশাদার কুস্তিগির ছিলেন। এছাড়া নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় রিয়েলিটি টিভি শো ‘টেরাস হাউসে’ অভিনয় করেছেন তিনি। গত বছরের ২৩ মে আত্মহত্যা করেন কিমুরা। অনলাইনে টেরাস হাউসের দর্শকদের ক্রমাগত সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় আত্মহত্যা করার আগে বেশ কয়েকটি টুইট করেছিলেন তিনি। কিমুরার টুইটগুলোতে আত্মহত্যার আভাস ছিল।
সাইবার বুলিং থেকে নিরাপদ থাকার উপায়
১. ফেক প্রোফাইল থেকে সচেতন থাকতে হবে।
২. সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে কোনও অজানা ব্যক্তির বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ করবেন না।
৩. আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেমন জন্ম তারিখ ফোন নম্বর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
৪. আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারে কখনোই অবাঞ্ছিত সফ্টওয়্যার ইনস্টল করবেন না।
৫. যদি কেউ আপনাকে একটি অশ্লীল বার্তা পাঠায়, একটি আক্রমণাত্মক উত্তর দিয়ে প্রতিক্রিয়া করবেন না।
৬. খুব সাবধানে ও সতর্কতার সাথে ফেসবুক ব্যবহার করা উচিত।
গুজব এড়িয়ে চলা
জেনে বা না জেনে অনালাইনে আপনার ছোট্ট একটি শেয়ার হতে পারে অনেক বড় ক্ষতির কারণ। ইন্টারনেট ব্যবহারে একটু দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমেই গুজব প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু প্রতিদিন এতসব ইনফরমেশনের ভিড়ে কোনটি সঠিক কোনটি ভুল বুঝবেন কীভাবে? এজন্য প্রথমেই তথ্যটির সোর্স খেয়াল করতে হবে। যে সোর্স থেকে তথ্যটি এসেছে তা বিশ্বাসযোগ্য কি না যাচাই করে দেখুন।
এছাড়াও খেয়াল করে দেখতে হবে- সংবাদটি অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সাইটে প্রকাশিত হয়েছে কি না। ওয়েব অ্যাড্রেসটি অদ্ভুত লাগছে কি না। যে প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা খবরটি দিয়েছেন তার নাম কোথাও শুনেছেন কি না। এই বিষয়গুলো যাচাই করার পর যদি মনে হয় ইনফরমেশনটি ভুল তবে অবশ্যই শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা
রিয়েল লাইফে আপনার একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য কি সবার সাথে শেয়ার করেন? তাহলে অনলাইনে কেনো? ইন্টারনেটের দুনিয়ায় শেয়ার করা আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন অনেক ক্ষেত্রে আপনার জন্যই ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
অনলাইনে নিজের পুরো নাম, ফোন নম্বর, ই-মেইল আইডি কিংবা পাসওয়ার্ড শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া নিরাপদ থাকতে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। লোকেশন সেটিং বন্ধ রাখার মাধ্যমে নিজের অবস্থান না জানানোই ভালো।
আপনার পোস্ট কারা দেখতে পারবে সেটি ঠিক করে দিতে পারেন। টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু রাখতে হবে। ই-মেইল আইডি বা ফোন নম্বর দিয়ে কেউ খোঁজার চেষ্টা করলে পাবে কি না সেটি ঠিক করে দিতে হবে।
ডি ইঞ্জিনিয়ার্স নিউজ এর পোর্টালে ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সকল আপডেট সবার আগে পেতে আমাদের নিউজ পোর্টাল ভিজিট করুন এবং ফেসবুক পেজে লাইক/ফলো দিয়ে রাখুন।