টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। বর্তমান সময়ের চাহিদাসম্পন্ন বিষয় টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার। বেশ কয়েকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অন্যতম। আসুন জেনে নেই, এই বিষয়ে পড়ার বিস্তারিত।টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং টেলিযোগাযোগ শিল্পের অন্তর্নিহিত প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি এবং তত্ত্ব নিয়ে হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার উভয় ক্ষেত্র সম্পর্কে আলোচনা করে। টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রটি রেডিও এবং টেলিভিশন থেকে শুরু করে উপগ্রহ, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ইন্টারনেট এবং অপটিকাল ফাইবার পর্যন্ত বিস্তৃত।
টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথযাত্রায় প্রযুক্তি খাত আমাদের দেশের টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি এনেছে ।আধুনিক বিশ্বের সব চেয়ে বড় সম্পদ এবং একই সাথে অস্ত্র হল তথ্য, যার কারনে টেলিকমিউনিকেশন আজ একটি গুরত্বপূর্ণ শিল্প হয়ে উঠেছে। দেশের সক্রিয় মোবাইল গ্রাহকদের সংখ্যা ২০০৮ সালের ৩০.৬% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৯৩.৪% এ পৌঁছেছে। গ্রাহকদের সংখ্যার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম মোবাইল বাজার এবং এ খাতে মোট জিডিপির পরিমান প্রায় ১.৮%। নিখুঁত এবং দ্রুত গতিতে তথ্য আদান প্রদানের জন্য মাইক্রো ডিভাইস থেকে শুরু করে স্যাটেলাইটের মত বৃহৎ সব প্রোজেক্ট তৈরি হচ্ছে।
টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে যেসব দক্ষতা অর্জন হবে
দক্ষতা অর্জনের জন্য অত্যাধুনিক সরঞ্জামের ব্যবহার করতে শিখে। এই কোর্স শেষে তারা টেলিকমিউনিকেশনে কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও জ্ঞান যেমন ডিজাইন, পণ্য বিকাশ, মোবাইল যোগাযোগ, রক্ষণাবেক্ষণ, ইনস্টলেশন, সমস্যা সমাধান এবং প্রযুক্তিগত বিক্রয় বিষয়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করেন।
নেটওয়ার্কিং এই কোর্সের মূল বিষয় হলেও শিক্ষার্থীদের আরও কিছু বিষয় সম্পর্কে এই কোর্সে শিক্ষাদান করা হয় যেমন – সার্কিট, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ম্যাথ, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, ফিজিক্স, ডাটা স্ট্রাকচার, ডিএলডি প্রভৃতি। এগুলোর পাশাপাশি আরও অনেক বিষয় পড়ানো হয় যেগুলো অন্যান্য ক্ষেত্রে যোগ্যতা অর্জন করতে সাহায্য করে।
কোর্স কোথায় বা কিভাবে করবেন
বাংলাদেশের মধ্যে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে ।এরমধ্যে কিছু সংখ্যক সরকারি প্রতিষ্ঠানে টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং –এ ডিপ্লোমা করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট সহ আরও কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা করা যায়।
টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মান
HSC সার্টিফিকেটের তুলনায় বেশি টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সটির মান , তবে এর মান স্নাতক এবং বিএসসি ডিগ্রির তুলনায় কম। টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং হল বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রবেশিক স্তর।
ভর্তির যোগ্যতা
টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং -এ ডিপ্লোমার চার বছর মেয়াদি আট সেমিস্টারের এই কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। উত্তীর্ণ হবার পর যে কোন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া সম্ভব। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড নীতিমালা প্রণয়ন করে থাকে।
একজন টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারের যে সকল দায়িত্ব থাকে
* তারযুক্ত ফোন, সেলুলার, কেবল এবং ব্রডব্যান্ড ডেটা প্রেরণের জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলি ডিজাইন এবং ইনস্টল করা। এবং ফাইবার অপটিক ক্যাবলিং, কমপ্লেক্স নেটওয়ার্ক এবং স্যুইচিং সিস্টেমের কাজও তাদের দায়িত্বে অন্তর্ভুক্ত।
* যোগাযোগের বিভিন্ন পদ্ধতিতে ভয়েস, ভিডিও, কল এবং ম্যাসেজ মতো ডেটা পরিচালনায় ভূমিকা রাখেন। এবং তারযুক্ত বা বেতার যোগাযোগের মাধ্যমে প্রেরিত ডেটার উচ্চ-মান নিশ্চিত করার জন্য টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি ডিজাইন ও স্থাপনের দায়িত্ব পালন করেন।
# টেলিকম সেক্টরে নতুন নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি অনুসন্ধান এবং সমন্বয় সম্পর্কিত পরামর্শ দেয়া। এবংনেটওয়ার্কের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ এবং সহায়তা সরবরাহ করা।
* পেশাদাররা নেটওয়ার্ক পরীক্ষা এবং মূল্যায়ন কার্যক্রম ডিজাইন করে এবং পরিচালনা করে। এবংনেটওয়ার্ক আন্তঃব্যবহারযোগ্যতা এবং সমন্বয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদান।
# টেলিযোগাযোগ সিস্টেমগুলি ডিজাইন, ইনস্টল এবং সমস্যা সমাধান করা। এবংনতুন এবং বিদ্যমান টেলিকম সরঞ্জামাদির হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার আপগ্রেড তত্ত্বাবধান করা।
* কম্পিউটার, সার্ভার, নেটওয়ার্ক, ভয়েস সম্পর্কিত প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলি মূল্যায়ন করে দ্রুত সমাধান করা।
কর্মক্ষেত্র
এন্ট্রি লেভেলে যে সকল সংস্থায় কর্মক্ষেত্র রয়েছে সেগুলোর নাম: টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলীরা তারযুক্ত ও ওয়্যারলেস টেলিযোগাযোগ সংস্থা, হাই-স্পিড ব্রডব্যান্ড কম্পিউটার নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং অপটিক্যাল ও ওয়্যারলেস বা স্যাটেলাইট যোগাযোগ সেবাদানকারী সংস্থা, ইঞ্জিনিয়ারিং পরামর্শকারী সংস্থাগুলি বা সরকারী প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে পারেন।
ডিপ্লোমা শেষে একজন টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার সাব অ্যাসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার যেসকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারেন।
BTCL, BTRC, BSCCL ,DPDC, DESCO ,BTRC,BASIS ,BMD ,Radar Station ,Satellite Earth Station,ব্যাংকের IT সেক্টর।
মিড লেভেল ইঞ্জিনিয়ার যে সকল প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারে তা হল: BTS ইন্সটলার, নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, সফটওয়্যার ডেভেলপার, ব্রডকাস্ট ইঞ্জিনিয়ার, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার, MCR সাপোর্ট, IT সাপোর্ট, অ্যাসিস্টেন্ট টেলিকম ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
- রেডিও স্টেশন।
- কম্পিউটার যোগাযোগ এবং নেটওয়ার্কিং কোম্পানী।
- টিভি চ্যানেল।
- বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা এবং ভোকেশনাল স্কুলে সহকারি আইসিটি শিক্ষক এবং ট্রেড ইন্সট্রাকটর হিসেবে।
- মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানী।
- অপটিক্যাল নেটওয়ার্কিং প্রতিষ্ঠান।
- জুনিয়র ইন্সট্রাকটর হিসেবে বিভিন্ন পলিটেকনিক ইন্সটিউটে।
উচ্চ শিক্ষার সুযোগ
ডিপ্লোমা সম্পন্নের পর একজন টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার যেসকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যে সব বিষয়ে B.Sc করতে পারেন সেগুলো হল-
* B.S.c ইন ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং।
# B.S.c ইন টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং।
* বিএসসি ইন কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং।
# B.S.c ইন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং।
একজন টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারের আয়
এন্ট্রি লেভেলে একজন টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারের আয় প্রতিষ্ঠান ভেদে হতে পারে ১৫০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০০০ টাকার মতো। তবে সময়ের সাথে সাথে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ফলে পদমর্যাদা এবং বেতন বাড়তে পারে।
ডি ইঞ্জিনিয়ার্স নিউজ এর পোর্টালে ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সকল আপডেট সবার আগে পেতে আমাদের নিউজ পোর্টাল ভিজিট করুন এবং ফেসবুক পেজে লাইক/ফলো দিয়ে রাখুন।